তাওহীদুল ইসলাম নূরী:
মহামারী করোনার কারণে গত বছর ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পনের মাসের বেশি সময় ধরে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পড়াশুনার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের অনিহার পাশাপাশি অধিকাংশ অভিভাবকও উদাসীন হয়ে পড়ছেন। অনলাইন ক্লাস যেভাবে সাড়া পাওয়ার আশা করা হয়েছিল, তেমন একটা সাড়া জাগে নি। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিকল্প পেশা বেছে নিয়েছেন দেশের কিন্ডারগার্ডেন স্কুলগুলোর সাথে জড়িত হাজার হাজার শিক্ষক। যখনই একটা নিদিষ্ট তারিখ পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, তখন সকলেই ভাবে ঐ দিনের পর থেকে হয়ত শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরতে পারবে। কিন্তু, সেই আশা যেন নিধুয়া পাথার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা ইউনিসেফ সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যাচ্ছে করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বে দীর্ঘ সময় ধরে যে কয়টি দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে সেখানে ১৪ টির মধ্যে বাংলাদেশ একটি। যদিও বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে
শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ, তারপরও অনেক প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। পূজা পালন, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ওরিয়েন্টেশন ক্লাস প্রোগ্রাম ও সরাসরি ভর্তি কার্যক্রম যারমধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেজন্যই তো আজ সকলের মনে এখন একটি প্রশ্ন ঘোরছে “করোনা কি শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাসে?”। অথচ, করোনার অজুহাতেই ২০২০ সনের এইচএসসি পরীক্ষা না নিয়ে পরীক্ষার্থীদের জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের নির্ভর করে অটোপাশ দেয়া হয়েছে। একইভাবে ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ভাগ্যে কী আছে সেটা আজও অজানা। অটোপাশ দেয়া হয়েছে ২০২০ সালের জেএসসি পরীক্ষার্থীদেরও।

বিশ্বে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩ নম্বরে। উন্নত রাষ্ট্রগুলোর চেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ও ছোট দেশ হিসেবে আমাদের দেশের অবস্থা অনেক ভাল। কয়েক মাস লকডাউনের পর থেকে শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের সমস্ত অফিস আদালত তার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে দেশের প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত চার কোটি শিক্ষার্থী শুধু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা নয়। তাদের অনেকেই ঝরে পড়ছেন, অনেকে বাল্যবিবাহে আবদ্ধ হচ্ছেন। আবার অনেকে শিশুশ্রমিকের সারিতে যুক্ত হচ্ছেন। সবচেয়ে কষ্টদায়ক সময় পার করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। তারা না পারছেন একটা মানসম্মত চাকরি করতে, না পারছেন কোন ব্যবসায়-শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক হিসেবে যোগদান করতে। সরকারের তরফ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগ সম্পন্ন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কথা কয়েকবার বলা হলেও সেটার কোন কার্যক্রমই চোখে পড়ছে না। তাই, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগ করে অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেয়া বর্তমানে শুধু শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষক নয় সমগ্র দেশবাসীর জোর দাবি।

 

তাওহীদুল ইসলাম নূরী
আইন বিভাগ (অধ্যয়নরত),
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।
শাহারবিল বাজার,চকরিয়া,কক্সবাজার।